রাশিয়া ও ইরানের তেলে নিষেধাজ্ঞা : সুবিধাভোগী এশিয়া, ক্ষতিতে ইউরোপ

রাশিয়া ও ইরানের তেলের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সুবিধা বয়ে এনেছে। এসব দেশ এখন কম দামে তেল পাচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে এশিয়ার দেশগুলো তেলের জন্য ইউরোপের তুলনায় অতিরিক্ত দাম দিয়ে আসছিল। ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে রয়টার্স এ তথ্য দিয়েছে।


তেলের জন্য অতিরিক্ত দামের বিষয়টি পরিচিত ছিল ‘এশিয়ান প্রিমিয়াম’ হিসেবে। ওপেকের মতো সংস্থার সদস্যদেশগুলো এশিয়ার দেশগুলোর কাছে জ্বালানি তেল বিক্রি করার সময় অতিরিক্ত দাম চাইত। বিশ্লেষক ও সরকারি কর্মকর্তা—সবাই জানতেন এশিয়ান প্রিমিয়াম সম্পর্কে।


তবে মস্কোর তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বরং অপ্রত্যাশিত ফলাফল এনে দিয়েছে। এশিয়ার দেশগুলো এখন আগের তুলনায় কম দামে তেল কিনতে পারছে। উল্টো ইউরোপের দেশগুলোকে প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে।


স্যাক্সো ব্যাংকের পণ্যবিষয়ক কৌশলবিদ ওলে হ্যানসেন বলেন, ‘এটি এখন নিরাপদেই বলা যায় যে এশিয়ায় তেলের বেশ কিছু বড় ভোক্তা, বিশেষ করে ভারত ও চীন পশ্চিমা অবরোধের সবচেয়ে বড় বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’


কেপলারের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গত এক বছরে রাশিয়া পশ্চিমা অবরোধের কারণে এশিয়ায় তাদের অপরিশোধিত তেলের বিক্রি দ্বিগুণ করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আরেক শিকার ইরান তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেল বিক্রি করেছে। তাদের তেলের বড় ক্রেতা চীন।


ইউক্রেনে হামলার আগে রাশিয়ার প্রধান অপরিশোধিত তেল উরাল ইউরোপে ব্রেন্ট তেলের দামের চেয়ে মাত্র কয়েক ডলার কমে বিক্রি হতো। রেফিনিটিভ এইকনের তথ্য বলছে, রাশিয়া এখন একই তেল এশিয়াতে ২৪ ডলার কম দামে বিক্রি করছে। তবে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, আসলে ব্যারেলপ্রতি ১০ থেকে ১৫ ডলার কম নেওয়া হচ্ছে।


ভারতের কোনো রিফাইনারি যদি প্রতিদিন দুই লাখ ব্যারেল তেল পরিশোধন করে, তাহলে ১৫ ডলার কমে পাওয়া অপরিশোধিত তেলের কারণে ইউরোপের যেকোনো রিফাইনারির তুলনায় তারা দিনে ৩০ লাখ ডলার সাশ্রয় করতে পারবে। এক বছরে তাদের সাশ্রয় দাঁড়াবে ১০০ কোটি ডলার।


ভারতের জ্বালানিমন্ত্রী হারদীপ সিং পুরি গত মাসে বলেন, যদি ‘ভালো দাম অব্যাহত থাকে’ তাহলে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে।


তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে যে পরিবর্তন এসেছে, তা সৌদি আরব এবং কিছু প্রধান রপ্তানিকারকের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সৌদি আরবের প্রধান তেল আরব লাইটস গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস সময়ে এশিয়ার ক্রেতাদের কাছে কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। তবে মার্চ ও এপ্রিলে সরবরাহ করা হবে, এমন তেলের দাম খানিকটা বাড়ানো হয়েছে।


ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তারপর থেকে এসভারড্রাপ খনির বেশির ভাগ তেল ইউরোপেই বিক্রি করা হয়েছে। অনেক রিফাইনারি রাশিয়ার উরাল অপরিশোধিত তেল বাদ দিয়ে এসভারড্রাপ শোধন করা শুরু করে।


তবে ইউরোপ দীর্ঘ সময় ধরে তেলের জন্য অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে যাবে, এটা অনেকে মনে করেন না। ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ হলে আবার হয়তো রাশিয়ার তেল ইউরোপে সরবরাহ শুরু হবে।